রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার আলোচনা করতে গিয়ে ও আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে উপরোক্ত শিক্ষা পদ্ধতির আলোচনা প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবে যখন শিক্ষার হাতে খড়ি হয়, তখন ভারত উপমহাদেশে উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত। ইংরেজ শিক্ষাচিন্তা দ্বারা পরিব্যাপ্ত মেকলে শিক্ষাপদ্ধতি সুপ্রতিষ্ঠিত। মেকলে ভারতবিদ্যা বা ভারতীয়দের সম্পর্কে খুবই উন্নাসিক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যেমন শৈশবে শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছিলেন, তেমনি আমাদের দেশের শিশুরা এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। শিশুর সাথে জীবনের কোনো সংযোগ নেই। মানুষের জীবনের অনেকগুলো ধাপ থাকে। একটি শিশু শৈশব, যৌবন, কৈশোর পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পদার্পণ করে। শিশুর বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রদানও তাই একই রকম হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমাদের দেশের পরিবার ও স্কুলগুলোর দিকে তাকালেই এর ভয়াবহ রূপ পরিলক্ষিত হয়। কী নির্মম, নিদারুণ বোঝা চাপিয়ে দিয়ে শিশুদেরকে মানুষ করার চেষ্টা চলছে। আসলে তারা তো ‘মানুষ’ হয় না। হয় শিক্ষার চাপে পিষ্ট একজন প্রাণিবৎ মানুষ। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বড় ত্রুটি হলো মুখস্তবিদ্যায় ছাত্রদেরকে পারদর্শী করে তোলা। যে শিক্ষার সাথে কোনো আনন্দ নেই, সেই শিক্ষায় কেউ মননশীল, সৃষ্টিশীল মানুষ হতে পারে না। আর সৃষ্টিশীলতা ব্যতীত শিক্ষার কোনো মূল্যও নেই। নিজের প্রতি, জীবন ও জগতের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধের শিক্ষাটা কোনো শিশুই মাতৃগর্ভ থেকে শিখে আসে না। পরিবারে, স্কুলে তাকে শেখাতে হয়। পাঠ্যপুস্তকের ও সহপাঠ বইয়ের আশ্রয়ে ও শিক্ষা-ব্যবস্থার ভিতর দিয়ে শিশুকে শেখাতে হয় কী করে দেশ, দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশকে আপন করে নেবে। কী করে দেশের মহৎ অর্জনগুলোকে ভালোবাসতে ও সম্মান করতে শিখবে, জাতি,ধর্ম,গোত্র,ধনী,দরিদ্র সকল মানুষকে কী করে ভালোবাসতে, শ্রদ্ধা করতে, সম্মান করে শিখবে।