শিক্ষার হেরফের
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য এবং ভাষা ও জীবনের সামঞ্জস্য এবং পরিপুর্ণ শিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাত্রদের প্রতি বাণী উপস্থাপন করেছিলেন যা এই প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়েছে ।
আমাদের দেহের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গা দরকার তাই বলে কেউ সাড়ে তিন হাত জায়গা নিয়ে সন্তুষ্ট ভাবে জীবনযপন করতে পারেনা । স্বাধীনভাবে বাঁচতে হলে সাড়ে তিন হাত এর বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে তেমনি শুধু প্রথাগত বা গন্ডিবদ্ধ শিক্ষায় ও কেউ পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে না ।
ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছেন । ইংরেজ শাসনামলে তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে কখনো সমর্থন করেননি তিনি । শিক্ষা মানুষকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার যোগ্য করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,
"অন্তরের অমৃত তাহার সাহায্যে আমরা মৃত্যুর হাত এরাবোই" ।
ইংরেজ আমলে শিক্ষার্থীরা ধান-চালের মত শিক্ষাকে মজুদ করে রাখত । ফলে তার পরিপাকের কোন প্রশ্ন ছিল না তেমনি এখন সময় শিক্ষার্থীদের কে সিলেবাস আকারে পড়ানো হয় ভালো চাকরির আশায় , তাদের লক্ষ্য থাকে না সিলেবাস বাদ দিয়ে এর বাহিরে কিছু শিখি স্বাধীনভাবে । স্বাধীনভাবে শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে শিশু শিশুই থেকে যায় পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠতে পারে না।
বিজ্ঞানের ভাষায় শুধু হাওয়া খেলে পেট ভরে না খাবার খেতে হয় । কিন্তু খাবার খাওয়ার পর হাওয়া খেলে হজম ভালো হয় । শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এখন বাংলা ভাষায় কম গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজি পড়ার পেছনে ছোটায় । এই পড়া ঠিকমতো হয়না পাশাপাশি অন্য পড়াও হয়না । না হয় খেলাধুলা, না হয় শরীরচর্চা, না হয় প্রকৃত জ্ঞান আহরণ। আসলে ছোটবেলায় আমাদের বাল্যশিক্ষা মূল ভাষা বঙ্গভাষার প্রতি ভাব ছিল না । আবার বয়স হওয়ার পর দৌড়ানো লাগে ইংরেজি সাহিত্যের পেছনে ।
আমাদের সমাজে যেসব শিক্ষক বাংলা ডিগ্রী অর্জন করেছেন তাদের অল্প শিক্ষিত বলে মনে করা হয় ।
" Horse is a novel animal "
এই ইংরেজি অনুবাদ একজন বাংলা ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষক যে ভাবে পড়াবেন একজন ইংরেজি ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষক কিন্তু ওভাবে পড়াবেন না । এর সঠিক অনুবাদ বাংলায় সম্ভব নয় । কিন্তু আমাদের একটাই লক্ষ্য যে সিলেবাস শেষ করে ভালো চাকরি পেতে হবে ।
পড়া মুখস্ত করে পাশ করলে ছাত্ররা বাংলা কাব্যের যথার্থ স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে না । আমরা বাঙালি, আমরা আমাদের ভাব প্রকাশ করবো বাংলা ভাষায়, প্রথম বাংলা ভাষায় যদি ভাবের সম্মেলনই না ঘটে তাহলে আমাদের চিন্তার বিকাশ কিভাবে ঘটবে । আমাদের সব আছে শুধু আহরণের অভাব ।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জীবনের সামঞ্জস্য সাধন করেছেন , পূর্বের অনেক মনীষীরা। বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন কিন্তু বাঙালির কাছে সাবলীল শিক্ষা ছিল। ইংরেজ এবং বাঙালির মধ্যে যোগসুত্র কিন্তু এই বঙ্গদর্শনই ঘটিয়েছিল । বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা পরিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা নয় । আমাদের প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করার পথ রয়েছে কিন্তু আমরা ঔপনিবেশিক শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়েছি। এমন হয়েছে আমাদের কাছে পানি আছে পিপাসা লেগেছে, পান করতে পারছিনা , পৃথিবীর মানুষ হাসছে দেখে, আমরা পারছি না কান্না থামাতে। সর্বোপরি আমাদের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য বিবেচনা করে , শিক্ষার হেরফের মুছে ফেলা দরকার ।
Name : MD. Saniatut Tanim Hossain.
I'd: 201-10-527.
Section: PC-(B).
Batch : 16th.
Thank You ....